বাংলা ১ম পত্র (সাহিত্য পাঠ) কবিতা একাদশ/দ্বাদশ ২০২০





শ্রেণি: একাদশ / দ্বাদশ
বিষয়: বাংলা ১ম পত্র (সাহিত্য পাঠ)
★কবিতা★ 
 ১ম ক্লাস
"বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ"
-কবি: মাইকেল মধুসূদন দত্ত
=================================
প্রিয় ছাত্র-ছাত্রীবৃন্দ, সকলের প্রতি আন্তরিক শুভেচ্ছা রইল। আশা করি করোনা ভাইরাসের প্রকোপ থেকে সুরক্ষিত ও নিরাপদে থাকতে তোমরা নিজ নিজ বাসায় অবস্থান করছো। পাশাপাশি তোমাদের আসন্ন এইস এস সি পরীক্ষা ২০২০-কে সামনে রেখে নিয়মিত অধ্যয়ন করে যাচ্ছো। 

আজ যে বিষয়টি উপস্থাপনের জন্য নির্বাচিত করেছি তা শিরোনামে দেখেছো। 
কবিতাংশের এ পাঠ থেকে বিগত দুই সালে কোন সৃজনশীল প্রশ্ন আসেনি। 

তাই এ বছরের জন্য কবিতাটি গুরুত্বপূর্ণ।
'বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ' কবিতাটি ভাষাগত ও ভাবার্থগত উভয় দিক দিয়ে কঠিন। নতুন করে আলোাচনা করলে দু'টিই সহজবোধ্য হবে।
তোমরা জানো, মাইকেল মধুসূদন দত্তের অমর সৃষ্টি 'মেঘনাদবধ কাব্য'।
 ইহা বাংলা সাহিত্যের প্রথম ও সার্থক মহাকাব্য। অমিত্রাক্ষর ছন্দে রচিত এ কাব্যের 'বধ' নামক ৬ষ্ঠ সর্গ বা বিভাগ থেকে আলোচ্য কবিতাটি সংকলন করা হয়েছে।

'বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ' কবিতাটি বিশ্লেষণ করলে লক্ষ্য করা যায় পুরো কবিতায় দুটি পক্ষ বিদ্যমান। পৌরাণিক বিখ্যাত কতগুলো চরিত্র দুটি পক্ষকে সমর্থন করেছে। 
প্রথমেই তোমাদের সে সম্পর্কে জানিয়ে দিচ্ছি।
স্বপক্ষ (রাক্ষস/দানব বংশ):
১. মেঘনাদ (ইন্দ্রজিৎ, অরিন্দম, বাসববিজয়ী);
২. রাবণ (রাক্ষসরাজ, লঙ্কাধিপতি, মেঘনাদের পিতা);
৩. নিকষা (রাবণ/কুম্ভকর্ণ/বিভীষণের মাতা);
৪. কুম্ভকর্ণ (রাবণের মধ্যম সহোদর)।

প্রতিপক্ষ:

১. বিভীষণ (মেঘনাদের চাচা, রাঘবদাস, স্বপক্ষ ত্যাগকারী বিশ্বাসঘাতক);
২. রাম (রাঘব, অযোধ্যার রাজা দশরথ ও রাণী কৌশল্যার ছেলে);
৩. লক্ষণ (রামচন্দ্রের বৈমাত্রেয় ভাই, তস্কর, সৌমিত্রি)।
[এখানে উল্লেখ্য যে, রামচন্দ্র হলেন দেবতা বিষ্ণুর ৭ম অবতার আর লক্ষণ তাঁর ছায়াসঙ্গী যারা রাক্ষস নিধনের জন্য মানবরূপে জন্ম নিয়েছিলেন]
প্রিয় শিক্ষার্থীরা, নির্ধারিত কবিতাটি তখনই ভালভাবে আয়ত্বে আসবে যখন কাহিনীর সূত্রপাত অর্থাৎ পূর্ব আলোচনা সম্বন্ধে জানা যাবে। সেই চেষ্টাই করছি।
সংস্কৃত ভাষার কবি বাল্মীকি রচিত জাত মহাকাব্য 'রামায়ণ' থেকে কাহিনী সংগ্রহ করেন কবি মধুসূদন। বাঙালি কবি কৃত্তিবাস ওঝা 'রামায়ণ' অনুবাদ করে বিখ্যাত হওয়ায় তাঁর কাব্য অবলম্বনে এবং পাশ্চাত্যের হোমার, মিল্টন, ট্যাসো, পেত্রার্ক, ভার্জিল প্রমুখ কবিদের ভাবধারা অনুসরণ করে 'মেঘনাদবধ কাব্য'টি শিল্পরূপ দেন তিনি।

জেনে নাও- বাল্য বা আদি কাণ্ড, অযোধ্যা কাণ্ড, অরণ্যকাণ্ড, কিষ্কিন্ধ্যাকাণ্ড, সুন্দরকাণ্ড, লঙ্কাকাণ্ড ও যুদ্ধোত্তর কাণ্ড নিয়ে মোট ৭টি খণ্ডে 'রামায়ণ' বিভক্ত। তম্মধ্যে 'লঙ্কাকাণ্ড'র ঘটনাবহুল ৩ দিন ২ রাত্রির কাহিনী স্থান পেয়েছে 'মেঘনাদবধ কাব্যে'। তাঁর এ কাব্যটি সাহিত্যিক মহাকাব্য হিসেবে চিহ্নিত।

সমগ্র 'মেঘনাদবধ কাব্য' মোট ৯টি সর্গ বা খণ্ডে বিভক্ত। যথা- ১.অভিষেক, ২.অস্ত্রলাভ, ৩.সমাগম, ৪.অশোকবন, ৫.উদ্যোগ, ৬.বধ, ৭.শক্তিনির্ভেদ, ৮.প্রেতপুরী ও ৯.সংস্ক্রিয়া। 

আর ৬ষ্ঠ সর্গে নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগারে লক্ষণ কর্তৃক নিরস্ত্র মেঘনাদ বধ (নিহত) হওয়ার পূর্ব মুহূর্তে আপন চাচা বিভীষণের বিশ্বাসঘাতকতা প্রমাণিত হলে চাচা-ভাতিজার যে কথোপকতন হয় তাই 'বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ' কবিতার প্রতিপাদ্য বিষয়।
এবার আসি মূল আলোচনায়, অযোধ্যার রাজা দশরথের প্রথম স্ত্রী কৌশল্যার গর্ভজাত সন্তান রামচন্দ্র পিতৃপ্রদত্ত আদেশ পালন করতে গিয়ে ১৪ বছরের জন্য পঞ্চবটী বনে বনবাসে গমন করেন।

 তার স্ত্রী সীতা এবং বৈমাত্রেয় ভাই লক্ষণ রামের সঙ্গী হন। নিকটাত্মীয়দের দূরে ঠেলে দিয়ে শোক সইতে না পেরে দশরথ মৃত্যুবরণ করেন।
একদিন লঙ্কার রাজা রাবণের রাক্ষস বোন শূর্পণখা এ বনে ভ্রমণ করতে এলে রাম-লক্ষণের সৌন্দর্যে আকৃষ্ট হন। তার অনৈতিক প্রস্তাবে রাগান্বিত হয়ে লক্ষণ খরগ দিয়ে শূর্পণখার নাক কেটে দেন। 

বোনের অপমান সইতে না পেরে রাবণ কৌশলে সীতাকে হরণ করে লঙ্কার অশোকবনে বন্দি করে রাখেন। সীতা উদ্ধারের জন্য রামচন্দ্র তাঁর ভক্ত হনুমান, বানর ও দেবতাদের সাহচর্যে সীতা উদ্ধারের জন্য লঙ্কা আক্রমণ করেন। শুরু হয় রাম-রাবণের যুদ্ধ। 
রাক্ষসরাজ রাবণের সৈন্য-সামন্তসহ বহু নিকটাত্মীয় যুদ্ধে প্রাণ হারান। 
এরমধ্যে রাবণের বীরপুত্র সেনাপতি বীরবাহু এবং বিপুল শক্তিধর ভাই কুম্ভকর্ণও আছেন। বীরবাহুর মৃত্যু দিয়ে ১ম সর্গ শুরু হয়।
দেবতা, দৈত্য, মানব তিন শ্রেণিকে পরাস্তকারী রাবণপুত্র মেঘনাদ পরবর্তী যুদ্ধের সেনাপতি পদে অভিষিক্ত হলে দেবতাপ্রদত্ত অস্ত্রের সহায়তায় তাঁকে কৌশলে হত্যার পরিকল্পণা করা হয়।

৬ষ্ঠ সর্গে নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগারে অগ্নিদেবতা ইষ্টদেবের পূজাদি সম্পন্ন করার সময় মেঘনাদের আপন চাচা রামভক্ত বিভীষণের দেখানো পথে লক্ষণ এসে সেখানে সশস্ত্র আক্রমণ করেন। মুত্যুর দ্বারপ্রান্তে এসে বিশ্বাসঘাতক চাচা বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ কতগুলো বাক্য বিনিময় করেন।


২য় পার্ট পাবেন 
কালেসন 

Post a Comment

abccduk@gmail.com

Previous Post Next Post